হুমায়ুন আহমেদ স্যার
জন্ম- ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালের মধ্যরাতে(ময়মনসিং জেলার কুতুবপুর গ্রামে)
মৃত্যু-১৯ জুলাই ২০১২ সালের মধ্যরাতে
দিন বদলের চেষ্টায় আমার জীবনকে অনেক টুকো বদলে দিতে পেরেছিলেন হুমায়ুন স্যার ।ইচ্ছে ছিল তার সামনে একবার হলেও এই সামান্য আমি দাঁড়াবো কিছু কৌতূহলের ঝোলা নিয়ে ।কিন্তু তা আর হলনা ।
পৃথিবীর মায়াকে পাস কাটিয়ে চলে গেলেন সবার দৃষ্টির অগচরে ।চোখের জল আর আকরে ধরে রাখতে পারিনা যখন ভাবি সামনের বই মেলাটা হবে হুমায়ুন স্যার বিহীন। কে আমাদের নতুন নতুন বই উপহার দিবে ??? তার বই পরে আমি সত্যি অনুপ্রানিত হয়ে নিজের জীবনকে এক আশ্চর্য নতুন জগতে পদার্পণ করাতে সক্ষম হয়েছি । স্যারের সৃষ্টি এক আজব চরিত্র হচ্ছে হিমু । এই হিমুকে ঘিরে আমার অনেক স্বপ্ন অন্তর্নিহিত আছে এই মনের ভিতরে । মানুষ কিভাবে এত সুন্দর করে একটা কাল্পনিক জগতকে সঠিক ধারাবাহিকতার মাধ্যমে ঠিকপথে পরিচালিত করতে পারে ? সেটা স্যারকে না দেখলে বুঝার উপায় নেই । আমার জীবনের পাওয়া কষ্টগুলোর মাঝে হুমায়ুন স্যার চলে যাওয়ার কষ্টটাকে ছোট করে দেখার কোন উপায় নেই । কেনো না তার মৃত্যূর খবর পেয়ে দুই দিন পর্যন্ত যে ভাবে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলাম , তা দেখে বুঝা যাবেনা যে , আমি তার ভক্ত ছাড়া আর কেউ না । কাদতে কাদতে চিন্তা করছিলাম আমি হুমায়ুন স্যারের কি হই ? যার জন্য এত কান্না করছি । তখন আবেগকে মন থেকে দূরে সরিয়ে চিন্তা করলাম আসলে একজন ভক্ত কতটুকু ভালবাসলে এত কান্না করতে পারে ? তাকে ভালবাসার হিসেবটা কি আমার চোখের জলের উপর নির্ভর করবে ? কখনও কোন কথা সাহিত্যিক এর জন্য চোখের জলকে বিষর্জন দেবার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি । আজ হুমায়ুন স্যারকে ঘিরে আমার সেই সৌভাগ্য হয়ে উঠেছে ।
আজ ২৩/০৭/২০১২ ইং তারিখ , দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট । আর ঠিক এই মুহুর্তে হুমায়ুন স্যারকে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করা হলো । এমন একটা দৃশ্য কি মেনে নেবার মতো ? এখন বুঝছি আমি তাকে কতটুকু ভালবেসেছিলাম । ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যাই নুহাশ পল্লীতে । টিভির সামনে বসে বসে আর চোখের জল ফেলতে এক মুহুর্ত ভাল লাগছে না । কত মানুষ যে আজ একসুরে কাদছে তা বুঝানোর মত ভাষা নেই । আমি কোন মৃত দেহের জানাযায় এত মানুষ আগে দেখেছি বলে মনে হয় না । আজ নুহাশ পল্লীতে লোকে লোকারন্য । আর তার মাঝে মুশল ধারায় বৃষ্টি পরছে । অবশ্য নুহাশ পল্লীর আজকের এই বৃষ্টিকে বৃষ্টি বললে ভূল হবে । বলা যায় নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন স্যারের শোকে প্রকৃতি যেন আজ বিষন্ন মনে কাঁদছে । আকাশের মেঘগুলো আজ যেন কষ্ট মাখা স্বরে বলছে , “ হুমায়ুন তোমাকে আজ বৃষ্টির জলের মাধ্যমে স্পর্শ করে নিজেকে ধন্য করতে চাই । শেষ বিদায়ে তোমাকে আমার চোখের জল দিয়ে ভিজিয়ে চোখের জলকে ধন্য করতে চাই । ” কিন্তু মেঘের কথা কেউ শুনেনি , কারণ আল্লাহ্ তাআলা মানুষকে সেই ক্ষমতা দেয়নি । হয়তবা হুমায়ুন স্যার বৃষ্টির দিনেই জন্মে ছিলেন । sorry স্যার জন্মে ছিলেন রাতে , মধ্যরাতে । হয়তবা বৃষ্টিতেই জন্ম হয়েছিলো আবার বৃষ্টিতেই তাকে কবরে চির নিদ্রায়িত করা হলো । হুমায়ুন স্যার অনেক বার জন্মকালকে পিছু টেনেছেন । জানতে চেয়েছেন তার জন্ম কি জোৎসনা রাতে নাকি বৃষ্টির মাঝে ? কিন্তু উত্তর মিলাতে সক্ষম হয়নি ।আজ নুহাশ পল্লীতে সবাই উপস্থিত হুমায়ুন স্যারকে চির বিদায় জানানোর জন্য । তিন মেয়ে – শীলা,নোভা,বিপাশা ও তিন পুত্র – নুহাশ,নিষাদ, নিনিত । তার ইচ্ছা পূরনের জন্য তাকে নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করার আদেশ দেন মা আয়েশা । আজ এত মানুষের ভালবাসা পেয়ে ও সেই ভালবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে চলে যাচ্ছেন নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে । আল্লাহ্ মানুষকে কেন ভালবাসার ও ভালোলাগার ক্ষমতা দিয়েছেন ? মানুষকে যদি তৃতীয় মাত্রার রোবটের মত তৈরি করত তাহলে হয়তবা মানুষ মানুষকে ভালবেসে কষ্ট পেতো না । আজ হাজারো মানুষের জলকে উপেক্ষা করে হুমায়ুন স্যার পালিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে । কোটি কোটি ভক্তের মাঝে কারো সাধ্য নেই তাকে আজ আকরে ধরে রাখবে । কারো ক্ষমতা নেই তাকে আজ কলম হাতে ধরিয়ে একটি অক্ষর লিখানোর । সবাই আজ খুব অসহায় । বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের মতো আজ সবাই নিরুপায় হয়ে অসহায়ের মতো আর্তনাদের চিৎকার জুড়ে দিয়েছেন । কারো কিছুই করার ক্ষমতা নাই । আজ হুমায়ুন স্যারের বড় ছেলে নুহাশ তার বাবার সৃষ্ট হিমুর চরিত্র অবলম্বন করে হলুদ পাঞ্জাবী গায়ে বাবার লাশের পাশে দাড়িয়ে হু হু করে কাদছে । তাকে দেখলে মনে হয় সেই বুঝি হিমু । স্যারের মৃত্যূতে হিমু ছুটে এসেছে স্যারের পাশে । কিন্তু হিমু তো কাদতে শিখেনি । হিমুরা তো কখনো কাদে না , কখনো কষ্ট পায়না । কিন্তু আজ কি হিমু সত্যি সত্যি কাদছে ? স্যারের মৃত্যুর সাথে সাথে হিমু কি তার জগৎ থেকে ছিটকে পড়েছে ? হয়তবা হতেও পারে । হয়তবা না ।আজ হুমায়ুন স্যারকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে , “ হুমায়ুন একবার চেয়ে দেখো তোমাকে বিদায় দিতে কত মানুষ এসেছে , একটিবার তাকিয়ে দেখো তোমার কত ভক্ত আজ চোখের জলে তোমারি তৈরি নুহাশ পল্লীর মাটি ভিজাচ্ছে তুমি চলে যাবে বলে । ওঠ হুমায়ুন ওঠ , চুপ করে থেকো না । ’’
লিখেছেন
রিমন আহমেদ সিমান্ত ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন